আর্দ্রতা কি
বিষয়: টেক্সটাইল টেস্টিং কোয়ালিটি কন্ট্রোল
বিষয় কোড: ৫০৪৫
অধ্যায়: ২য়
আর্দ্রতা কি
কোনো স্থানের বায়ুতে কতটুকু জলীয়বাষ্প আছে তা যে ভৌত রাশি দ্বারা নির্দেশ করা হয় তাকে আর্দ্রতা বলে। পানির গ্যাসীয় অবস্থা তথা জলীয়বাষ্প সচরাচর মানুষের চোখে অদৃশ্য থাকে। আর কোনো নির্দিষ্ট স্থানের আর্দ্রতা হলো সেই স্থানের বায়ুতে উপস্থিত জলীয়বাষ্পের পরিমাণ অর্থাৎ বায়ুতে উপস্থিত জলীয়বাষ্পের ঘনমাত্রা। আর্দ্রতা নির্দিষ্ট কোনো স্থানে বৃষ্টিপাত, গুড়িগুড়ি বৃষ্টি, তুষারপাত, sleet, ice pellets, graupel, hail ইত্যাদি বর্ষণের (precipitation) এবং শিশির ও কুয়াশার উপস্থিতির কিংবা নির্দিষ্ট কোনো স্থানে এসব ঘটনা সংঘটনের সম্ভাবনা নির্দেশ করে।
কোনো নির্দিষ্ট স্থানের বা ব্যবস্থার আর্দ্রতা ঐ স্থান বা ব্যবস্থার তাপমাত্রা ও চাপের ওপর নির্ভর করে। একই পরিমাণ জলীয়বাষ্প উষ্ণ বায়ু অপেক্ষা শীতল বায়ুতে অধিক আপেক্ষিক আর্দ্রতার সৃষ্টি করে। আর্দ্রতার সাথে সম্পর্কযুক্ত একটি পরামিতি হচ্ছে শিশিরাঙ্ক বা শিশিরবিন্দু। যদি কোন স্থানের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় তাহলে ঐ স্থানের বায়ুকে সম্পৃক্ত করার জন্য যে পরিমাণ জলীয়বাষ্প আবশ্যক, তার পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে। আবার, এক খণ্ড বায়ুর তাপমাত্রা হ্রাস পেলে, এতে জল যুক্ত না করলেও কিংবা এটা থেকে জল অপসারণ না করলেও এটি (বায়ু) সম্পৃক্তি বিন্দুতে পৌঁছবে।
এক খণ্ড বায়ুর মধ্যে ধারণকৃত জলীয়বাষ্পের পরিমাণে বিস্তর ব্যবধান ঘটতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, সম্পৃক্ততার কাছাকাছি অবস্থায় রয়েছে এমন প্রতি ঘন মিটার বায়ু ৩০ °সে (৮৬ °ফা) তাপমাত্রায় ২৮ গ্রাম পানি ধারণ করতে পারে, কিন্তু ৮ °সে (৪৬ °ফা) তাপমাত্রার ক্ষেত্রে প্রতি ঘন মিটার বায়ুতে কেবল ৮ গ্রাম পানি থাকা সম্ভব।
আর্দ্রতার তিনটি প্রাথমিক পরিমাপ ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। যথা: পরম, আপেক্ষিক এবং নির্দিষ্ট আর্দ্রতা। পরম আর্দ্রতাকে প্রতি একক আয়তনের আর্দ্র বায়ুতে উপস্থিত জলীয় বাষ্পের ভরের আকারে (গ্রাম প্রতি ঘনমিটার এককে) অথবা প্রতি একক ভরের শুষ্ক বায়ুতে উপস্থিত জলীয় বাষ্পের ভরের আকারে (সাধারণত গ্রাম প্রতি কিলোগ্রাম এককে) প্রকাশ করা হয়।
আপেক্ষিক আর্দ্রতাকে সচরাচর শতকরা হিসাবে প্রকাশ করা হয়, যা একই তাপমাত্রায় সর্বোচ্চ যে আর্দ্রতা পাওয়া যায়, তার সাপেক্ষে পরম আর্দ্রতার একটি তাৎক্ষণিক অবস্থা নির্দেশ করে। আর, নির্দিষ্ট আর্দ্রতা হলো উপস্থিত জলীয় বাষ্প ভরের ও আর্দ্র বায়ুর মোট ভরের অনুপাত।
আর্দ্রতা ভূপৃষ্ঠীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ এক ভূমিকা পালন করে। যেসব প্রাণী তাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ঘর্ম-নিঃসরণ প্রক্রিয়ার উপর নির্ভরশীল, সেসব প্রাণীর ক্ষেত্রে আর্দ্রতার আধিক্য এদের ত্বকের উপরিভাগ থেকে আর্দ্র-স্বতঃবাষ্পীভবনের হার কমিয়ে ফেলার মাধ্যমে এদের শরীরের তাপ বিনিময়ের (তাপ বের করে দেওয়ার) প্রক্রিয়াটির কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে। এই প্রভাবটি আর্দ্রতা সূচক (humidex) নামেও পরিচিত, যা একটি তাপ-সূচক ছক ব্যবহার করে হিসাব করা যায়।
বায়ুর জলীয়বাষ্প “ধারণের” কিংবা এর “সম্পৃক্ত” হওয়ার ধারণাটিকে প্রায়শই আপেক্ষিক আর্দ্রতার ধারণাজনিত সম্পর্কের ক্ষেত্রে উল্লেখ করা হয়। সে যাই হোক, এই বিষয়টি বিভ্রান্তিকর যে, একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট কোনো স্থানে যে পরিমাণ জলীয়বাষ্প প্রবেশ করে (কিংবা প্রবেশ করতে পারে), তা ঐ স্থানে উপস্থিত বায়ুর (নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, ইত্যাদির) পরিমাণের থেকে আলাদা।
প্রকৃতপক্ষে, বায়ু দ্বারা পরিপূর্ণ নির্দিষ্ট আয়তনের একটি স্থানের জলীয়বাষ্প ধারণের ক্ষেত্রে সাম্যাবস্থার যে সক্ষমতা (সাম্যাবস্থার-ধারণক্ষমতা বা equilibrium capacity) থাকে, একই আয়তনের শূন্যস্থানের জলীয়বাষ্প ধারণের ক্ষেত্রেও প্রায় একই সাম্য-ধারণক্ষমতা থাকে।
এখানে, শূন্যস্থান ও বায়ু দ্বারা পরিপূর্ণ স্থান উভয় ক্ষেত্রেই সাম্যাবস্থাকে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পানির সাম্যাবস্থার-বাষ্প-চাপের (equilibrium vapor pressure) মাধ্যমে বিবেচনা করা হয়েছে। আর্দ্রতার সাথে জড়িত একটি পুনরাবৃত্তিক পরামিতি হলো “বিবর্ধন গুণক”, যা জলীয়বাষ্পের সম্পৃক্তি-চাপের ওপর বায়ু কী প্রভাব ফেলে তা অন্তর্ভুক্ত করে। এই বিবর্ধন গুণকের অধীনে আর্দ্রতাকে আলোচনার ক্ষেত্রে খুব সামান্যই পার্থক্য পাওয়া যায়, বড় মাপের কোনো সূক্ষ্মতার প্রয়োজন না পড়লে অনেক হিসাব বা গাণিতিক সমস্যায় যা অগ্রাহ্য করা করা যায়।
আর্দ্রতা কি নিয়ে বিস্তারিত :
আরও পড়ুন…